ড. মোঃ শাহ আলম
বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি অন্যতম প্রধান জনবহুল দেশ। ক্রমবর্ধমান এ বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে আমাদের দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, প্রতি বছর শতকরা ১ ভাগ হারে চাষযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লীয় অঞ্চলের একটি বিরাট অংশ বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে, বন্যা এবং জলাবদ্ধতা বাংলাদেশের কৃষির একটি সাধারণ সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ।
বাংলাদেশে ভাসমান চাষাবাদের ইতিহাস ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের পুরনো। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হচ্ছে পিরোজপুর। বঙ্গপোসাগরের পানির লেবেল বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলের অনেক নিম্ন এলাকার মতো পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া এবং কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই এলাকার কৃষকগণ জলাবদ্ধ ও নিম্নাঞ্চলের পানির উপর ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা ও সবজি উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে বিল্পব ঘটিয়েছে। আগে এই এলাকায় গেলে দেখা যেত মাইলের পর মাইল এলাকায় শুধু পানি আর পানি। আর এখন এই এলাকায় গেলে দেখা যাবে পানির উপর ভাসছে বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এই এলাকার কৃষকরা নিজেদের কৌশলে পানির ওপর গড়ে তুলেছেন ভাসমান সবজির বাগান ও বীজতলা। এখানে ২০০ হেক্টর জমিতে এই ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ করা হয়। পানির উপর ভাসমান বাগানগুলোতে কৃষকরা বর্ষার সময় শসা, ঢেড়স, লালশাক ও ডাঁটা শাক উৎপাদন করে থাকে। আর শীতকালে চাষ করে লাউ, শিম, বেগুন, বরবটি, করলা, পেঁপে, টমেটো, শসা, মরমা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, মরিচ ইত্যাদি শাকসবজি ও মসলার চারা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর-বাঁওড় অঞ্চলে লাভজনক ভাসমান চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের বিলঝিল ও বর্ষাকালে সারা দেশের জলাবদ্ধ অঞ্চলগুলোতে এটি বিকল্প চাষাবাদের লাগসই প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে দেশে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জলাভূমিতে ভাসমান চাষাবাদ করা হচ্ছে। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই লাখ হেক্টর প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাভূমি রয়েছে যার ৫০ হাজার হেক্টর এলাকা সফলভাবে ভাসমান চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব।
ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সমস্যা বা অসুবিধার মধ্যে রয়েছে; কচুরিপানার অভাব ও ভাসমান বেডের জন্য এখনও কোনো নির্দিষ্ট আকার নির্ধারণ করা হয়নি, মানসম্মত চারার অভাব, রোপণ বা বপন, ফসল বিন্যাস ও সার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতিতে অনুন্নত কৃষি তাত্তি¡ক পরিচর্যা, ফসলের স্থানীয় ও কম ফলনশীল জাতের বীজের ব্যবহার এবং মানসম্মত চারার অভাব, অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার প্রভৃতি। সেই সঙ্গে রয়েছে ইঁদুর, কার্পজাতীয় মাছ ও রোগবালাই এর আক্রমণসহ নানা সীমাবদ্ধতা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা না গেলে দেশ বিদেশে সাড়া জাগানো ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ পদ্ধতি টেকসই হবে না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করা যাচ্ছে উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। পাশাপাশি ইঁদুরের উপদ্রব থেকেও ফসল রক্ষা পাবে।
ইঁদুর জাতীয় প্রাণী হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিকারক প্রাণী যা ফসল বপন থেকে শুরু করে ফসল কাঁটা ও সংগ্রহ পর্যন্ত বিস্তারলাভ করে ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর যে কোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে খুব দ্রæত বংশ বিস্তার করতে সক্ষম। ইঁদুর শুধু ভাসমান বেডে ফসলেরই ক্ষতি করেনা ভাসমানবেডেরও মারাত্ত¡ক ক্ষতি করে থাকে। ভাসমান বেডে কি পরিমান ক্ষতি করে তার সঠিক তথ্য এখনও জানা যায়নি। ভাসমান বেডে বিভিন্ন সবজি ও চারা গাছের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। তাছাড়া ইঁদুর জাতীয় প্রাণী বিভিন্ন রোগের বাহক/ সংরক্ষক হিসাবেও কাজ করে, যেমন- প্লেগ, মিউরিন টাইফাস, লেপটোস্পারোসিস, সালমোনেলোসিস, ইঁদুর কমড়ানো জ¦র, ইত্যাদি। ভাসমান বেডে দুই থেকে তিনটি প্রজাতির ইঁদুর ফসলের বেশী ক্ষতি করে যেমন- মাঠের কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর ও ঘরের ইঁদুর বা গেছো ইঁদুর ।
মাঠের কালো ইঁদুর বা ছোট ব্যান্ডিকুট ইঁদুর
সব রকমের কৃষিজাত ফসলেই এদের পাওয়া যায়। এছাড়া শহর এলাকা, ঘরবাড়ি এবং গুদামেও এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মাঠের কালো ইঁদুর মাঠ ফসলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা মাঝারি আকৃতির, ওজন প্রায় ১৫০-৩৫০ গ্রাম, পশম কালো ধুসর রঙের। মাথাও শরীরের মোট দৈর্ঘ্যরে তুলনায় লেজ কিছুটা খাটো। এরা সাতারে পটু। লম্বায় ৭.৫-২৫ সেমি.। এরা গর্ত তৈরী করে বসবাস করে। গর্ত ৮-১০ মিটার লম্বা ৭০ সেমি. পর্যন্ত গভীর এবং ৭-৮ সেমি. ব্যাস বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এই ইঁদুর ভাসমানবেডে ফসল কেটে, খেয়ে ও ভাসমানবেড কেটে নষ্ট করে থাকে।
মাঠের বড় কালো ইঁদুর বা বড় ব্যান্ডিকুট ইঁদুর
মাঠের বড় কালো ইঁদুর দেখতে মাঠের কাল ইঁদুরের ন্যায়। কিন্তু তাদের চেয়ে আকারে বেশ বড়, মুখাকৃতি সরু, ৩৫০-১০০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পিছনের পা বেশ বড় এবং কাল হয় বলে সহজেই চেনা যায়। মাথা ও দেহের দৈর্ঘ্য ১৫-৩০ সেমি.। এ ইঁদুরের রং কালচে ধুসর বা তামাটে বর্ণের। মাথা ও শরীরের মোট দৈর্ঘ্যরে তুলনায় লেজ কিছুটা খাটো। লেজ বেশ মোটা, লেজের রিং গুলো স্পষ্ট, পিছনের পা বড়, চওড়া ও পায়ের পাতার নিচের দিকে কালো। বাংলাদেশের সব নিচু এলাকায় এদের পাওয়া যায়।এই ইঁদুর ভাসমানবেডে ফসল কেটে, খেয়ে ও ভাসমানবেড কেটে নষ্ট করে থাকে।
গেছো ইঁদুর/ঘরের ইঁদুর
গেছো ইঁদুর সাধারণত: মাঝারি ধরনের, লম্বাটে, লালচে বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এদের ওজন প্রায় ১০০- ১৫০ গ্রাম। শরীরের নিচের দিকটা সাদাটে বা হালকা বর্ণের। দেহের দৈর্ঘ্য ৭-২২ সেমি. মাথা ও শরীরে মোট দৈর্ঘ্যরে তুলনায় লেজ লম্বা। লেজের দৈর্ঘ্য ৫-২৩ সেমি.। এরা মাটিতে গর্ত না করে ঘরের মাঁচায় বা গুপ্ত স্থানে গাছে বাসা তৈরি করে বংশ বৃদ্ধি করে। এদেরকে সাধারণত মাঠে কম দেখা যায়, তবে বাড়ির আশেপাশে, উচুঁ এলাকায়, নারিকেল ও বিভিন্ন ফল জাতীয় গাছে বেশি দেখা যায়। এরা ভাসমান বেডের বিভিন্ন সবজি যেমন- লাউ, মিস্টিকুমড়া, চালকুমড়া, শসা এবং চারা গাছের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে।
সমন্বিত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, ইঁদুর দমন একটি পরিবেশগত কৌশল যে ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্তু কোন প্রজাতিকে ধ্বংস করা নয়। ইঁদুর দমনের সবচেয়ে ভাল উপায় হলো, ইঁদুরের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য ও বাসস্থান সম্পর্কে জানা এবং এই সব উপাদানগুলো সীমিত করা যা ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে ইঁদুর দমনের কর্মকৌশল নিজেদের নির্ধারণ করতে হবে এবং নিজেদেরকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইঁদুর দমন পদ্ধতিসমূহকে আমরা সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। (ক) পরিবেশসম্মতভাবে ইঁদুর দমন বা অরাসায়নিক পদ্ধতি (খ) বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুর দমন বা রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুুর দমন ।
ক) পরিবেশ সম্মতভাবে দমন : কোন রকম বিষ ব্যবহার না করে অর্থাৎ পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে ইঁদুর দমনই হলো পরিবেশ সম্মতভাবে ইঁদুর দমন বা অরাসায়নিকপদ্ধতি। বিভিন্নভাবে এটা করা যায়। যেমন-
পরিদর্শন ও সজাগ দৃষ্টির মাধ্যমে : ইঁদুর দমনের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এ সমস্যা সমন্ধে সর্বদা সজাগ থাকা যার অর্থ হচ্ছে ঘর বাড়িতে বা ক্ষেত খামারে ইঁদুরের উপস্থিতি, গতিবিধি এবং আক্রমণের তীব্রতার উপর সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং নিয়মিত পরিদর্শন করা। ইঁদুরের উপস্থিতির কোন চিহ্ন দেখা মাত্র তাকে খুঁজে বের করে যে কোন উপায়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা উচিত। এ পরিদর্শন কোন এক এলাকার ইঁদুর দমন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আশ্রয়স্থল কমানো/বাসস্থান ব্যবস্থাপনা : ভাসমানবেডে অগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে, কারণ ইঁদুর ঝোপলো জায়গা পছন্দ করে।
প্রতিবন্ধকতা : ভাসমানবেডে উপযুক্ত পদ্ধতিতে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করা ইঁদুর দমন একটি প্রধান উপায়। ভাসমান বেডের চারপাশে প্রতিবন্ধকতার কৌশল অবলম্বন করে ইঁদুরের ক্ষতি কমানো যায়। যেমন : ক. ভাসমানবেডের চারপাশে পলিথিন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হবে। খ. পানির উপড়ে কাঠের এবং বাঁশের তৈরি স্থাপনার ধাতব পাত বা পলিথিন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হবে।
জৈব নিয়ন্ত্রণ বা পরভোজী প্রাণীর মাধ্যমে ইঁদুর দমন : অন্যান্য প্রাণীর মত ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরও পরভোজী প্রাণী আছে, তন্মধ্যে বিড়াল, বনবিড়াল, কুকুর, খেকশিয়াল, পাতিশিয়াল, বাজপাখী, চিল, প্যাঁচা, বেজি, সাপ, গুইসাপ ইত্যাদি প্রাণী ইঁদুর খায়। এ সমস্ত উপকারী পরভোজী প্রাণী মেরে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্যাঁচা ইঁদুরের একটা বড় শত্রæ। ইঁদুরের ক্ষতি করে বলতে প্যাঁচা ইঁদুর খেয়ে বেচে থাকে। আমরা যদি ভাসমান বেডের আশেপাশে বাঁশ দিয়ে প্যাঁচা বসার ব্যবস্থা করে দেই, তাহলে প্যাঁচা রাতের বেলা বসে ইঁদুর কে খাবে ও ফসলের ক্ষতি কম হবে।
নিবিড়ভাবে ফাঁদ পাতার মাধ্যমে ইঁদুর দমন : নিবিড়ভাবে বিভিন্ন রকমের জীবন্ত ও মরন ফাঁদ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যায়। ফাঁদে ইঁদুরকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সহজে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এমন খাদ্যই টোপ হিসাবে ব্যবহার করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ শুঁটকি মাছ, বিস্কুট, আলু, পাউরুটি ইত্যাদি। প্রতিদিন নতুন টোপ ব্যবহার করতে হবে।
(খ) রাসায়নিক দমন বা ইঁদুরনাশক দিয়ে দমন : রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বহু যুগ ধরে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন চলে আসছে। বিষ ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক পদ্ধতিকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, (ক) তীব্র বা তাৎক্ষণিক বিষ (খ) বহুমাত্রা বা দীর্ঘমেয়াদি বিষ।
ক. তীব্র বা তাৎক্ষণিক বিষ : যে সমস্ত বিষ খেলে ইঁদুরের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে তীব্র বিষ বলা হয় যেমন- জিংক ফসফাইড। বিষটোপ তৈরিও খুব সহজ। তাই অতি সহজে কৃষক ভাইরা জিংক ফসফাইড বিষটোপ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করতে পারে। এই বিষ থেকে তৈরি বিষটোপ খেয়ে ইঁদুর সাথে সাথেই মারা যায়। এই বিষ ভাসমান বেডের উপর বাঁশের বা প্লাস্টিকের তৈরি বেইট স্টেশনের পাইপের ভেতর প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু এই বিষটোপের প্রধান অসুবিধা হলো বিষটোপ লাজুকতা। বিষটোপ ব্যবহারের পূর্বে ২-৩ দিন বিষহীন টোপ ব্যবহার করে ইঁদুরকে টোপ খেতে অভ্যস্ত করে নিলে ইঁদুর দমনে সফলতার হার অনেক বেড়ে যায়। তবে কোনো ক্রমেই পর পর দু’ তিন রাত বিষটোপ ব্যবহারের পর ঐ স্থানে এক মাস আর এ বিষ ব্যবহার না করাই ভালো।
(খ) দীর্ঘমেয়াদি বিষ : যে সমস্ত বিষ খেলে ইঁদুর তাৎক্ষণিকভাবে বিষক্রিয়ায় মারা না গেলেও ধীরে ধীরে অসুস্থ বা দুর্বল হয়ে ২-১৪ দিনের মধ্যে মারা যায় তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি বিষ বলা হয়। এ ধরনের বিষ খেলে সহসা কোনো আক্রান্ত লক্ষণ ধরা পড়ে না বিধায় পরিবারের অন্যান্য ইঁদুররাও এ ধরনের বিষটোপ খেতে কোনো কুণ্ঠা/দ্বিধাগ্রস্ত হয় না। ফলে একসাথে অনেক ইঁদুর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ধরনের বিষটোপে বিষটোপ লাজুকতা দেখা যায় না। এদেশে ল্যানিরটি, ক্লেরাট, ব্রোমাপয়েন্ট নামে বিভিন্ন কীটনশকের দোকানে পাওয়া যায়।
ইঁদুর সম্পূর্ণভাবে দমন বা নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তাই এদের সংখ্যা কমিয়ে মূল্যবান ফসল রক্ষা করে খাদ্যাভাব দূর করার চেষ্টা করতে হবে। কোন নির্দিষ্ট একক পদ্ধতি ইঁদুর দমনের জন্য যথেষ্ট নয়। ইঁদুর দমনের সফলতা নির্ভর করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন সময়োপযোগী পদ্ধতি ব্যবহারের উপর। অতএব সম্মিলিত এবং সময়োপযোগী দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করলেই ভাসমান বেডে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো সম্ভব। য়
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, অনিষ্টকারী মেরুদন্ডী প্রাণী বিভাগ, বিএআরআই, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৯১১৮৫৭৫৮৬, ই-মেইল : alamvpd@gmail.com